নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২১
এসিল্যান্ড মাসুদুল হক
একজন সহকারি কমিশনার ও এক্সকিউটিভ ম্যাজিট্রেট মাসুদুল হক। দায়িত্ববান, কর্মঠ, সৎ ও কর্মনিষ্ঠায় সর্বদায় নিয়োজিত। ২০১৯ সালে ২ জুলাই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার (ভূমি)-দপ্তরে যোগদান করেন এ ভূমি কর্মকর্তা। যোগদানের পর থেকেই দায়িত্বের প্রতি সর্বদাই নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়। ভূমি সেবায় এনেছেন প্রযুক্তি প্রয়োগ। সরকারের “হাঠের মুঠোয় ভূমিসেবা”-কে জনগণের কাছে দ্রুত পৌছে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন সর্বদা।
সহকারী কমিশনার (ভূমি)র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে ছয় মাসেরও বেশি দায়িত্ব পালন করেন। এসময় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ করার পাশাপাশি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে গত একবছরে ১৩৮ টি মোবাইল কোর্টে ৩৭৫টি বিভিন্ন মামলায় ৩৭৫ জনকে দন্ড প্রদান করা হয়।
মাদকের ব্যবহার বন্ধ করণ, জুয়া বন্ধ, বাল্যবিয়ে-ইভটিজিং বন্ধ, দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, মৎস্য সম্পদ রক্ষা, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া চলতি বছরে মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে ফ্রন্টলাইনার যোদ্ধা হয়ে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ,জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, লকডাউন নিশ্চিতকরণ, করোনা প্রতিরোধে মাস্ক নিশ্চিত করণ প্রভৃতি বিষয়ে উক্ত মোবাইল কোর্ট গুলো পরিচালিত হয়। প্রশাসনে ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর বদলে গেছে অফিসের কার্যক্রমও। অফিসকক্ষ বৃদ্ধি করণ, অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যবর্ধন (ইন্টেরিয়র ডিজাইন) সহ প্রবেশপথের সিড়ির আধুনিকায়ন প্রভৃতি কাজ দায়িত্ব পালনের এ একবছরে সম্পন্ন করেছেন। সেবা গ্রহীতাদের বসার স্থানও সৌন্দর্যবর্ধন করে দিয়েছেন।
জনগণ যাতে কর্মকর্তার সাথে সরাসরি মনখুলে কথা বলতে পারেন সে সেবামূলক সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন তিনি। জনগণ যাতে কোন প্রকার সরকারি কর্মকর্তার সাথে ভয়ভীতি না পেয়ে কাংখিত সেবা পেতে কোন প্রকার দালালদের খপ্পরে না পরে সরাসরি কর্মকর্তার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারেন সেটি নিশ্চিত করেছেন।
সরকারের ভূমি সেবায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারেই বেশি জোর দেন তিনি। এজন্য প্রত্যেক ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসে উচ্চ গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। এসকল অফিসের নামজারি সহকারী, ইউনয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা/উপ-সহকারী কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, নাজির কাম-ক্যাশিয়ারসহ সকল কর্মচারীকে ভূমি মন্ত্রণালয় ও ভূমি সংস্কার বোর্ডের উদ্যোগে উন্নতমানের ল্যাপটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার সরবরাহ করা হয়েছে। এতে করে জনগণের দোরগোড়ায় কম সময়ে, কম অর্থ খরচে ও কম শ্রম ব্যয় করেই যাতে সেবা গ্রহিতারা সেবা গ্রহণ করতে পারেন তার শতভাগ সেবা পাচ্ছেন এ উপজেলার মানুষ।
২০১৯ সালের ০১ জুলাই হতে শতভাগ ই-নামজারি চালু করা হয়েছে এ উপজেলায়। আগে জনগণকে ভূমি অফিসে গিয়ে মিউটেশন করে ৪৫ সেবা কার্যদিবসের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। যা সেবা গ্রহীতাদের সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয় হতো। এখন সর্বোচ্চ ২৮ দিনেই কম শ্রমে ই-নামজারি করতে সক্ষম হচ্ছেন। ই- নামজারির শুনানি গ্রহন করে সরকার নির্ধারিত ফি গ্রহনপূর্বক মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে সেবাগ্রহীতাকে জমির খতিয়ান ও ডিসিআর প্রদান করা হয়েছে ও হচ্ছে। যা সেবাগ্রহীতাদের মাঝে অকল্পনীয় বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সেই সাথে
ভূমি সেবা ডিজিটাল হওয়ায় সেবা গ্রহীতারা তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস এর মাধ্যমে সকল বিষয় জানতে পারছে। এতে করে একবার মাত্র শুনানির দিন অফিসে হাজির হয়ে শুনানি শেষে ২০ মিনিটের মধ্যে অনুমোদিত নামজারির সরকার নির্ধারিত ফি প্রদানপূর্বক খতিয়ান ও ডিসিআর পেয়ে যাচ্ছেন সহজেই। আর প্রবাসীদের ও জরুরী ক্ষেত্রে কিছু কিছু মামলা ০৭ দিনের মধ্যে নিস্পত্তি হয়ে থাকে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ১০ (দশ) দিনের নিস্পত্তি করা হচ্ছে। এতে করে জনগণ ভূমি ব্যবস্থাপনায় যে পঙ্কিল অবস্থায় পতিত হয়ে নিজেকে অসহায় অনুভব করত, সে অবস্থা থেকে সম্পূর্ণরুপে পরিত্রাণ পেয়েছে।
সনওয়ারী নামজারী নথি ও রেকর্ড বই সূমহ যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ কল্পে নতুন ৩০০০ প্রিন্টেড ব্যাগে নথি সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং অফিস ও রেকর্ড রুমের সার্বিক নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা। বিগত অর্থ বছরে ৪৫টি ভূমিহীন পরিবারকে ভূমি বন্দোবস্তসহ চলমান মুজিব বর্ষে ১৫২ জন ভূমিহীন – গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রায় তিন একর কৃষি খাস জমি উদ্ধার ও চিহ্নিত করা হয়েছে।
এছাড়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায় ডিজিটাল করার জন্য বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন মৌজার হোল্ডিং ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে আপলোড করন কার্যক্রম চলমান আছে। জেলা প্রশাসক ড. সাবিনা ইয়াসমিনের উদ্যোগে উপজেলা ভূমি অফিসসহ সকল ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও রেকর্ড রুমের সার্বিক নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা।
এছাড়াও তিনি মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে উপজেলা ভূমি অফিস রঙ্গিন বাতি দিয়ে সুসজ্জিত করার পাশাপাশি অফিসের প্রাচীরকে সরকারের গৃহীত ও বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র যেমনঃ পদ্মাসেতু রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, শতভাগ বিদ্যুতায়নসহ বিভিন্ন প্রজেক্টের আকর্ষণীয় চিত্র দিয়ে সাজিয়ে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদর্শন করে জনসাধারণকে অবহিত করার ব্যবস্থা করেছেন। যা স্থানীয়দের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এ ব্যপারে সহকারী কমিশনার( ভূমি) মাসুদুল হক বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আমরা সরকারি কর্মচারীগণ সর্বদা জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সে ধারাবাহিকতায় আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট আছি ও থাকবো। মানুষের কাছে ভূমি সেবা পৌঁছে দিতে সর্বদা প্রস্তুত আছি। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। আমি আমার উপর ন্যস্ত দায়িত্বগুলো সবার সহযোগিতায় সঠিকভাবে পালন করতে চাই। এ দায়িত্ব পালনে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
Posted ৩:১০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২১
দৈনিক প্রথম দৃষ্টি | প্রথম দৃষ্টি