শামীমুল হক | মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০২০
অষ্টম ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন- ভাতা কিন্তু কম নয়। এ ওয়েজ বোর্ড সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার জন্য। টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম এ ওয়েজ বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে টেলিভিশনে যারা কাজ করেন কেউ কেউ এ ওয়েজ বোর্ডের চেয়ে অনেক বেশি টাকা বেতন পান। আবার কেউ কেউ কম টাকা বেতন পান। মোট কথা তাদের বেতন নির্ধারণ হয় কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায়।
২০১৩ সালে অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড ঘোষণা করে সরকার। সেখানে সংবাদপত্রের বার্তা বিভাগে কর্মরত সম্পাদক থেকে শুরু করে শিক্ষানবিশ সাংবাদিকদের জন্য মোট ছয়টি গ্রেড করা হয়। সম্পাদক স্পেশাল গ্রেডে বেতন পান। গ্রেড-১ যুগ্ম সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক থেকে বিশেষ প্রতিনিধি পর্যন্ত। গ্রেড-২ যুগ্ম বার্তা সম্পাদক থেকে সিনিয়র রিপোর্টার। গ্রেড-৩ সহ-সম্পাদক থেকে স্টাফ রিপোর্টার। গ্রেড-৪ শিক্ষানবিশ সহ-সম্পাদক থেকে শিক্ষানবিশ রিপোর্টার। গ্রেড-৫ শিক্ষানবিশ সম্পাদনা সহকারী।
সাংবাদিকতায় প্রবেশের প্রথম ধাপ হলো শিক্ষানবিশ রিপোর্টার। আর শিক্ষানবিশ রিপোর্টারের গ্রেড হলো ৪। অষ্টম ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী এই গ্রেডের মোট বেতন ২৮,৪২০ টাকা। ইতিমধ্যে সরকার নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করেছে। এতে বেতন ৮৫ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। নবম ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী শিক্ষানবিশ রিপোর্টারদের বেতন দাঁড়ায় ৪৪ হাজার টাকার উপরে। তবে গত দুই দশক ধরে প্রতিযোগিতার বাজারে ওয়েজ বোর্ডের দিকে না তাকিয়ে কর্তৃপক্ষ অনেক বেশি বেতন দিয়ে সাংবাদিকদের নিয়োগ দিচ্ছে। এতে দেখা যায়, একজন ভালো রিপোর্টার ৬০ হাজার থেকে লাখ টাকাও বেতন পান।
তবে প্রথম সারির পত্রিকাগুলো ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করলেও বেশির ভাগ পত্রিকা তা বাস্তবায়ন করেনি। এ ছাড়া ক’টি প্রথম সারির পত্রিকাসহ সব পত্রিকার কর্তৃপক্ষই সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত দেন না। ওয়েজ বোর্ডে ঢাকার বাইরের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদেরও সম্মানী ভাতা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু বেশির ভাগ পত্রিকা ওয়েজ বোর্ডের ধার ধারে না। ফলে জেলা ও উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিতে পারে না। তারা সাংবাদিকতাকে পার্টটাইম হিসেবে গ্রহণ করে। ফুল টাইম হিসেবে অন্য পেশাকে বেছে নেন। এরমধ্যে স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা, ঠিকাদারি, ব্যবসাসহ অন্য আরো পেশা। তারা সাংবাদিকতা করেন সম্মানের জন্য। সমাজের অনাচার, দুর্নীতি তুলে ধরার জন্য।
সাংবাদিকতা সম্মানের পেশা বলেই এক শ্রেণির মানুষ একে ব্যবহার করে। তারা নামধারী সাংবাদিক। কেউ প্রতারক, কেউ থানার দালাল। কেউবা ধান্ধাবাজ। আবার কেউ চাঁদাবাজ। এরা সাংবাদিকতা পেশার নাম ভাঙিয়ে নানা প্রতারণা করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ এসব প্রতারককে দেখেই মনে করেন সাংবাদিক পেশাটাই এমন। কিন্তু তারা যে সাংবাদিক পেশাকে নিয়ে বাটপারি করছে এটা সাধারণ মানুষ বুঝতে চান না। এমন অনেক বাটপার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। তারপরও নামধারী সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলায় এমন সাংবাদিক ঘুরে বেড়ায় প্রকাশ্যে। অবলীলায় নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে। অথচ তারা সাংবাদিক নন। তারা বাটপার। চাঁদাবাজ। তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজ ও প্রশাসনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলেই হয়তো এসব বাটপারের সংখ্যা কমে যাবে। কিংবা সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে বাটপারি করতে কেউ সাহস পাবে না।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
Posted ১২:৫০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০২০
দৈনিক প্রথম দৃষ্টি | প্রথম দৃষ্টি