তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি : | মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১
প্রথমবারের মতো পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চাষ হচ্ছে কোরিয়ান তেলবীজ ফসল পেরিলা। সূর্যমূখী ও সরিষার মতো পেরিলার বীজ থেকেও উৎপন্ন হয় ভোজ্যতেল । পেরিলার আদি নিবাস চীনে হলেও দক্ষিণ কোরিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে বিশ্বে এটি কোরিয়ান পেরিলা নামে পরিচিত। দেশের এই পেরিলার ফসলের সাথে অধিকাংশ কৃষক এখনো তেমন অবগত না হলেও উৎপাদন গবেষণা সুফল মিলছে।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের হারাদিঘী কাজী পাড়া গ্রামের প্রথম বারের মতো পরিক্ষামূলকভাবে ২ একর জমিতে পেরিলা চাষ করছেন সৈয়দ রোকনুজ্জামান।
সরেজমিনে দেখা যায়, তরতাজা পেরিলা গাছে ফুল এসেছে। প্রথমত সবুজ পেরিলা দেখতে মনে হয়েছিল সবুজের এক সমারোহ কিংবা কোন শাকসবজির বাগান। দেখতে অনেকটা পান পাতার মতো এবং প্রতিটি পাতা সবুজ বর্ণের।
কৃষক সৈয়দ রোকনুজ্জামান সাথে কথা বললে তিনি জানান, কৃষি অফিস থেকেই আমাকে বীজ দেওয়া হয়। জমিটি পতিত থাকায় সিদ্ধান্ত নিলাম নতুন ফসল চাষ করে দেখি কি হয়। তেঁতুলিয়ায় এই প্রথম আমি পেরিলা চাষ করছি। ফলনও মোটামোটি ভালো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, পেরিলা ক্ষেতে মৌমাছির ব্যাপক আনাগোনা দেখা যায়। পেরিলা চাষের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ করাও সম্ভব। ফলনে লাভ জনক হলে আগামীতে আরো অধিক জমিতে পেরিলা ও মধু চাষ করব।
জানা যায়, জাতটি দেশীয়ভাবে উদ্ভাবন করেছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজননবিদ-প্রফেসর ড.এইচ এম এম তারিক হোসেন , বিসিএস (কৃষি), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পিএইচডি ফেলো মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদার। পেরিলার বৈশিষ্ট্য হিসেবে রয়েছে উচ্চমাত্রা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড (৫০-৬০%), অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড প্রায় ৯২%, ক্ষতিকর ই্রুসিক এসিড মুক্ত, জাতটি মিন্ট পরিবার ভুক্ত হওয়ায় তেলে সুগন্ধ রয়েছে। এটি বন্যামুক্ত যেকোন ধরণের জমি বা মাটি, প্রচলিত তেল ভাঙ্গানোর মেশিনে বীজ থেকে তেল আহরণ করা যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত আউস আবাদের পর কৃষকের জমিগুলো পতিত পড়ে থাকে। এ সময়টাতে কেউ সরিষা আবাদ করে। যেহেতু এই ফসল আড়াই মাসে উঠে যায় তাই কৃষকদের জমি পতিত না রেখে পেরিলা আবাদ করলে ভালো একটি ফসল উঠে আসবে। ৭০- ৭৫ দিনের মধ্যে এই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। সেই দিক থেকে একই জমিতে একাধিক ফসল করা যায়।
তিনি আরও জানান, পেরিলার পাতা সবজি ও বীজকে তেল উৎপাদনে কাজে লাগিয়ে দুইভাবে ব্যবহার করা যায়। পেরিলার ফুল এলে ক্ষেতে মৌমাছির ব্যাপক আনাগোনা থাকায় বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে পেরিলার চাষ ব্যাপকতা বাড়াতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক সেক্টর আরো সমৃদ্ধ হবে। তাই জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের দিককে গুরুত্ব দিয়ে এই ফসল চাষ শুরু করা হয়েছে। অন্যদিকে মানব শরিরের জন্য অনেক উপকারি। পেরিলায় শতকরা ৬৫ ভাগই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা বিশেষত হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক, ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে এটি কার্যক্রর ভূমিকা রাখবে।
Posted ৭:৩০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১
দৈনিক প্রথম দৃষ্টি | প্রথম দৃষ্টি