তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি | মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাজিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গত ৮ বছরে ৬শ নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। গত সোমবার ভালোবাসা দিবসে এ রেকর্ড করেছেন ক্লিনিকটির সিএইচসিপি মেহেরুন নেহার লিলি। সরকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌছে দেয়া স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি আস্থা বহুগুণে বেড়েছে।
১৯৯৮ সালে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে কাজিপাড়া গ্রামে ক্লিনিকটি স্থাপিত হয়। জমি দিয়েছিলেন রমিনা খাতুন। এ ক্লিনিকটি থেকে তেঁতুলিয়া হাসপাতালের দূরত্ব ২০ কি.মি ও জেলা আধুনিক সদর হাসপাতাল ৩৫ কি.মি। এ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২০১১ সালে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন মেহেরুন নেহার লিলি। যোগদানের পর তেঁতুলিয়া হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন প্রাথমিক চিকিৎসা।
২০১৪ সালে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে কমিউনিটি স্কীল বার্থ এটেনেডেন্ট (সিএসবিএ) বিষয়ে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পরের বছর থেকেই অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি নরমাল ডেলিভারি কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে নরমাল ডেলিভারির কাজ। প্রথম ডেলিভারির কাজটি করেছিলেন অত্যন্ত বুকে দুরু দুরু ভয় নিয়ে। মাত্র ১ ঘন্টার চেষ্টায় সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের পর থেকেই তার কাজের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। সদালাপের কারণে অল্প দিনেই হয়ে উঠেন আপন। এলাকার হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষ খুঁজে পায় আস্থার এক নতুন ঠিকানা। ৮ বছরে ৬শ নরমাল ডেলিভারি করে হয়ে উঠেছেন আস্থার সেবক। সবার কাছ থেকেই পাচ্ছেন অনুপ্রেরণার শুভেচ্ছা-ভালোবাসা।
মেহেরুন নেহার লিলি বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমার প্রচন্ড ভয় লাগতো। ভাবতাম আমার দ্বারা এ জটিল কাজ কিভাবে সম্ভব হবে। ফরিদা আক্তার নামের এক নারীর প্রথম ডেলিভারী সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে আমার সাহস আরো বেড়ে গেল। কনকনে শীতে অথবা বৃষ্টিতে ভিজে, সারারাত পরিশ্রম করে যখন একটি গর্ভবতী মায়ের গর্ভ হতে ফুটফুটে সুস্থ্য সন্তান দুনিয়াতে আসতো তখন ভুলে যেতাম সব কষ্ট। ডেলিভারী করতে পারলে আমার খুব আনন্দ হয়। আমার নিকট আত্মীয় অনেকের ডেলিভারী করেছি যেটা আমার অতৃপ্ত ভাললাগা ও প্রাপ্তি। আমার এ অসাধ্য কাজে সার্বিক পরামর্শসহ সাহস জুগিয়েছেন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা: পীতাম্বর রায়, এইচ আই শরীফ উদ্দিন, এএইচআই জমির উদ্দিন এবং এইচএ দেলোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
লিলি আরও বলেন, ভালোবাসা দিবসে আল্পনা বেগম নামের এক প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি করে ৬শ পূর্ণ করলাম। নতুন বছরে জানুয়ারিতে ১১টি ও চলতি মাস ফেব্রæয়ারির ৫টি দিয়ে ৬শত নরমাল ডেলিভারি করেছি। বিশেষ করে এখানকার হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যারা সিজার করাতে পারেন না, তারা খুব সহজে নরমাল ডেলিভারি করাতে আমার কাছে আস্থা নিয়ে আসছেন। এখন পর্যন্ত কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি শিশু ও মা সুস্থ্য রয়েছেন। এখন রাত-দিনে সমস্যা হলেই ডাক পড়ে। রোগীরা সরাসরি কিংবা মুঠোফোনে সমস্যার কথা বলছেন। তাদের সেবা করতে পেরে ভালোলাগে।
নরমাল ডেলিভারির কাজে সন্তুষ্ট গৃহবধু আল্পনা বেগম জানান, লিলি আপা ভালো মানুষ। যখনই তাঁকে ফোন দিই তখনই পাওয়া যায়। নরমাল ডেলিভারিতে তাকে ডাকলেই পাওয়া যায়। খুব সুন্দরভাবে অল্প সময়েই আমার ডেলিভারী সম্পন্ন করেছেন। এতে আমার খরচও বেঁচে গেছে। তাঁর কাজে আমিসহ সবাই সন্তুষ্ট।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.আবুল কাশেম বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে ৬শ পূর্ণ হওয়াটা অত্যন্ত গৌরবের। উত্তরাঞ্চলে এরকম রেকর্ড খুবই কম। অত্র উপজেলার অন্যান্য ক্লিনিকগুলোতে গর্ভবতী নারীর অভিভাবকরা কমিউনিটি ক্লিনিকে এনে নরমালি ডেলিভারি করাচ্ছেন। সিএইচসিপি মেহেরুন নেহার লিলির এ রেকর্ড প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। তাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Posted ২:২০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
দৈনিক প্রথম দৃষ্টি | প্রথম দৃষ্টি