তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি : | সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১
ভ্রাম্যমান আদালতের দন্ডের পরিবর্তে মানবিক সহায়তা তুলে দিচ্ছেন তেঁতুলিয়ার ইউএনও সোহাগ চন্দ্র সাহা
মহামারি করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ রোধকল্পে সরকার কর্তৃক সার্বিক চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপে বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন, জনসাধারণের মাঝে গণসচেতনতা সৃষ্টি, হাট বাজার ও জনসমাগম রোধসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে নিয়মিত ভ্রাম্যমান অভিযান ও মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। চলমান কঠোর লকডাউনে নির্ধারিত দেয়া সময়ের মধ্যে দোকানপাট বন্ধসহ জনসাধারণকে বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে থাকতে নিষেধ করা হয়েছে। এই আরোপিত সরকারি বিধি অনেকেই মানছেন না পেটের দায়ে। বিকেল ৫টার মধ্যে হাটবাজারের দোকানপাট বন্ধ থাকার কথা থাকলেও যারা খোলা রাখছেন, তাদেরকে বিধি মোতাবেক ভ্রাম্যমান আদালতে দন্ড প্রদান করা হয়।
এবার দন্ড না দিয়ে মানবিক সহায়তা দিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সোহাগ চন্দ্র সাহা। রবিবার বিকেল ৬টায় শালবাহান ইউনিয়নের বোয়ালমারী আমতলীর গ্রামীণ বাজারে মোবাইল কোর্ট অভিযান ও বাজার মনিটরিংয়ের সময় রাস্তার পার্শ্বে দোকানের সামনে এক চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিকে জীর্ণ শরীরে ৮/১০টি ছোট ছোট মাছ বিক্রয় করতে দেখতে পান ইউএনও সোহাগ চন্দ্র সাহা। ক্রেতাশুন্য বাজারে মাছগুলো মাছগুলো পচে যাওয়ার উপক্রম হলেও মিলছিলো না ক্রেতা। দোকানির চোখে-মুখে হতাশার ছাপ দেখে ভ্রাম্যমান দন্ডের পরিবর্তে বাড়িয়ে দিলেন মানবিক সহায়তার হাত। মাছ ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর মানবিক (ত্রাণ) সহায়তা।
জানা যায় চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা তেমন ভালো যাচ্ছিল না শালবাহান ইউনিয়নের মুনিগছ গ্রামের চল্লিশোর্ধ্ব মাছ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিনের। স্ত্রী সন্তানসহ ৫ সদস্যদের সংসার চলছে চরম টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে। পেটের দায়ে অসুস্থ শরীর নিয়েই বিধিনিষেধ অমান্য করে কয়েকটি মাছ বিক্রি করছিলেন তিনি। ইউএনও স্যারকে দেখে ভয় পেলেও দন্ডের পরিবর্তে ত্রাণ সহায়তা পেয়ে নিম্নআয়ের এই মাছ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিনের চোখে মুখে ফুটে উঠে স্বস্তির আনন্দ।
মাছ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, করোনার সময়ে খুব কষ্টে যাচ্ছে দিন। ইউএনও স্যারকে দেখে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। না জানি কত টাকা জরিমানা করে। যখন সব খুলে বললাম, তখন স্যার জরিমানা না করে খাবারের ব্যাগ দিলেন, সত্যিই এটা কিভাবে প্রকাশ করবো বুঝতে পারছি না। আল্লাহ পাক উনাকে ভালো করুন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, করোনাকালিন সময়ে নি¤œ আয়ের মানুষ ভালো নেই বুঝতে পারি। কিন্তু প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার আরোপিত বিধিনিষেধ তো মানতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি, ভ্রাম্যমান আদালতে দন্ড নয়, এর পরিস্থিতি পর্যালোচনার মধ্য থেকে দন্ডের পরিবর্তে মানবিক সহায়তা দিতে। করোনাকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় ও নিম্নআয়ের মানুষদের পাশে একটুখানি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে যার যার নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের দানশীল, দানবীর, বিত্তশালী ও সামর্থ্যবান ব্যক্তিগণের প্রতি অনুরোধ জানান এ নির্বাহী কর্মকর্তা।
Posted ৩:১৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১
দৈনিক প্রথম দৃষ্টি | প্রথম দৃষ্টি