নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২১
সত্তর বয়সী জয়গুন বেগম। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। স্বামীর মৃত্যুর পর অবহেলায় জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। ঘর থাকা সত্তে¡ও এক ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় হয় তার। সেই অবহেলা জীবনের অধ্যায়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ঘোষিত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাড়ি করে দেয়ার ঘোষণার পর তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে ১৪২ পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করে নির্মাণ করা হয় রঙিন টিনে মনোরম পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। সেই তালিকায় স্থান পায় বিধবা জয়গুন বেগমও। বৃদ্ধ বয়েসে এসে এরকম রঙিন টিনের দৃষ্টিনন্দন পাকা বাড়ি পাবেন, কল্পনাও করেননি তিনি। রবিবার দুপুরে সদর ইউনিয়নের ঈদগাহ বস্তিতে জয়গুন বেগমের বাড়িতে তার সাথে কথা বললে তিনি চোখের পানি ফেলে বলেন, ‘আমার মা ( শেখ হাসিনা) আমারে ঘর করে দিছে, মা অনেক অনেক দিন বেঁচে থাকুক’।
দিগজ্জ্বয়ের হাসি দেখা যায় প্রতিবন্ধী নসিম উদ্দিনের মুখেও। ‘ঘর পাইছি, আমি ঘর পাইছি–খুব ভালা লাগছে। ধন্যবাদ, ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী’। কান্নাঝরা কন্ঠে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বৈশাখুর চোখ বেয়ে দেখা যায় আনন্দের অশ্রæ। ঠিকানাহীন ভিক্ষাবৃত্তিতে চলে সংসার। এই বয়েসে এসে পাকা বাড়ি পাব কল্পনাও করিনি’।
আশ্রয়ণ-২ এর ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে সরকারি বাড়ি প্রদানের প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আগে গত ২০ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের ঘাটিয়ারপাড়া গ্রামে গিয়েছিলেন এ প্রতিবেদক। সেখানে সত্তর বয়সী সুফিয়া বেগমের বাড়িতে গিয়ে জানা যায় স্বামী হারা নি:সন্তান সুফিয়ার কষ্টার্জিত জীবন। কাঠের ক্রাচে করে চলতে হয় তাকে। চোখেও খুব কম দেখেন। কথাও কম বলেন। এই অসহায় নারীকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে রঙিন টিনে সেমি পাকা ঘর করে দেয়া হয়েছে। শেষ বয়েসে এসে এরকম একটা ঘর পাবেন, স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি। ঘর পাওয়ার অনুভূতি জানতে তার সাথে কথা বললে, ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলেন, ‘শেখের বেটি মোক (আমাকে) একটা ঘর করে দিল, খুব উপকার হইল’।
একই ইউনিয়নের জাকিরজোত গ্রামের উপকারভোগী সেলিনা খাতুনের বাড়ি। অসহায় নারী। স্বামী নেই, ছেলে আছে, পাথর শ্রমিক। কষ্ট-দূর্ভোগে চলে দৈনন্দিন জীবন। রঙিন টিনের নতুন ঘর পেয়ে তিনিও আনন্দে আপ্লুত। মুখে ফুটে উঠে অভাবনীয় স্বপ্নজয়ের হাসি। কথা বললে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হামাক (আমাকে) ঘর দিছে। খুব উপকার হইল। আল্লাহ্ অনেক অনেক দিন হামার প্রধানমন্ত্রীক বাঁচে রহক।’
জয়গুন, সুফিয়া, সেলিনা খাতুনের মতো রয়েছে এরকম অনেক গৃহহীন নারীর প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়া অভাবনীয় স্বপ্নজয়ের আপ্লুত হওয়ার গল্প। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার মুজিববর্ষের ঘোষিত গৃহহীন, ভূমিহীন, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ঘর করে আশ্রয়ণ করে দেয়ার অক্লান্ত পরিশ্রমে কর্মসাধ্য করেছেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাসুদুল হক। এ কাজের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১৪২টি গৃহহীনকে খুঁজে বের করে জমি নির্বাচন, গৃহ নির্মাণে সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে কর্মসম্পাদন করছেন নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, মুজিব শতবর্ষ ‘জমিও নেই বাড়িও নেই’ এরকম গৃহহীন পরিবারদের প্রাথমিক পর্যায়ে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সেমি পাকা বাড়ি। সদর ইউনিয়নের ঈদগাহ, রনচন্ডী, কাশিমগঞ্জ বাংলাবান্ধা, শালবাহান, মাগুরমারী, রওশনপুর, বুড়াবুড়ি ও দেবনগরে স্থানগুলোতে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের নির্মিত হয়েছে নতুন ঘর। প্রতিটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রতিটি পাকা ঘরে থাকছে দুটি কক্ষ, রান্নাঘর, বারান্দা আর শৌচাগার। সুপেয় পানির জন্য থাকছে প্রতি দুটি পরিবারের জন্য একটি নলকূপ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, মুজিববর্ষে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের দিন এ উপজেলার জন্য বরাদ্দ ১৪২ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার দৃষ্টিনন্দন সেমি পাকা বাড়ির চাবি তুলে দিতে পেরেছি। আমরা চেষ্টা করেছি, যারা এ উপহার পাওয়ার উপযোগী, তাদের খুঁজে বের করে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মুখে হাসি ফুটাতে।
Posted ৪:৫১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২১
দৈনিক প্রথম দৃষ্টি | প্রথম দৃষ্টি