রাকিবুল ইসলাম, সাতক্ষীরা | শুক্রবার, ০২ অক্টোবর ২০২০
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে জেলাব্যাপী চলছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। করোনা ভাইরাসের কারণে এবার দুর্গোৎসবের চির-পরিচিত আমেজ না থাকলেও মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরি কাজ, সরগম হচ্ছে মার্কেট ও শপিং-মল।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে পূজার আমেজ ঘিরে শহরের মার্কেট গুলোতে কেনাকাটার উপর দেওয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। ক্রেতারাও পূজার কেনাকাটা করতে ভিড় করছে বিভিন্ন গার্মেন্টস, কসমেটিকস ও জুতার দোকানে। তবে এবছর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দুর্গাপূজা পালনের কড়া নির্দেশনা আছে।
বারইপাড়া মন্দিরের পুরোহিত যতীন্দ্র মোহন জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আর কয়েকদিন বাকি। প্রতিবছর অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দেবী দুর্গার আগমন ঘটে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মানুসারে সত্য, ত্রেতা, দাপর, কলি যুগের মধ্যে ত্রেতা যুগের অবতার রাজা রামচন্দ্রের আমল থেকে এই দুর্গাপূজা পালন হয়ে আসছে।
অশুভ শক্তি অসুরের অত্যাচারে মানবকুল এমনকি দেবতাকুলও অতিষ্ঠ হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলে, ঈশ্বর তার সকল শক্তি একীভূত করে নারী মূর্তি ধারণ করে দেবী দুর্গাকে ধরণিতে পাঠায়। দেবী দুর্গা অশুভ অশুরকে পরাজিত করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে।
তিনি আরও জানান, পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার মহালয়া হয় ১৭ সেপ্টেম্বর। কিন্তু পঞ্জিকার হিসাবে এবার আশ্বিন মাস ‘মল মাস’, মানে অশুভ মাস। সে কারণে এবার আশ্বিনে দেবীর পূজা হবে না। পূজা হবে কার্তিক মাসে। সেই হিসেবে এবার দেবী দুর্গা ‘মত্যে আসবেন’ মহালয়ার ৩৫ দিন পরে। আগামী ২১ অক্টোবর পঞ্চমীর মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়বে। ২২ অক্টোবর ষষ্ঠী, ২৩ অক্টোবর সপ্তমী, ২৪ অক্টোবর অষ্টমী, ২৫ অক্টোবর নবমী, ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে ৬ দিন ব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা পরিসমাপ্তি ঘটবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার মন্ডপে মন্ডপে চলছে দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রস্তুতি। পূজা মন্ডপগুলোতে চলছে সৌন্দর্য-মন্ডিত প্রতিমা তৈরির প্রতিযোগিতা। ইতোমধ্যে কিছু কিছু পূজা মন্ডপে প্রতিমার অবকাঠামোগত মাটির কাজ শেষ পর্যায়ে। তবে এ প্রতিমাগুলোতে রংয়ের কাজ করা হবে পূজার কয়েকদিন আগেই। আবার কোথাও কোথাও চলছে প্যান্ডেল তৈরি আর সাজসজ্জার কাজ।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির তথ্য মতে, জেলায় ৫শ’ ৬৮টি মন্ডপে এবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে আগের তুলনায় এবার মন্ডপের সংখ্যা কম। এর মধ্যে সদর থানায় ৯৭টি মন্ডপে, আশাশুনি থানায় ১শ’ ৫টি মন্ডপে, দেবহাটা থানায় ২১টি মন্ডপে, কালিগঞ্জ থানায় ৫২টি মন্ডপে, পাটকেলঘাটা ও তালা থানায় ১শ’ ৮৫টি, শ্যামনগর থানায় ৬৭ টি মন্ডপে ও কলারোয়া থানায় ৪১ টি মন্ডপে,দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল জানান, ‘এবারের পূজায় স্বাস্থ্যবিধির ওপরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য পূজার ব্যবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন হতে পারে। জেলায় প্রায় ৫শ’ ৬৮ টি মন্ডপেদুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে’। তিনি আরো জানান, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে জেলা প্রশাসন ও পূজা কমিটির সিন্ধান্ত মোতাবেক পূজা মন্ডপেপ্রবেশে ২৬ টি শর্ত দেয়া হয়েছে।
বিশেষ করে পূজা মন্ডপেমাক্স ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া মন্ডপে প্রবেশের জন্য এবং মন্ড থেকে বাইরে যাওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক আলাদা গেট করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব মÐপের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশের পাশাপাশি থাকবে আনসার ও গ্রাম পুলিশ স্বেচ্ছাসেবী সদস্য’।
Posted ১:২০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ অক্টোবর ২০২০
দৈনিক প্রথম দৃষ্টি | প্রথম দৃষ্টি